ব্যাংকিং খাতের প্রতারণা নিয়ন্ত্রনে করনীয় বিষয়গুলো

ব্যাংকিং ইতিহাসের শুরু থেকেই এর সাথে প্রতারণা শব্দটি জড়িত। প্রতারণা সংক্রান্ত অনেক ঘটনাই আছে। যেমন,কর্মকর্তার অর্থ আত্মসাৎ করা, নিজের হিসাব নম্বরে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর করা ও আরো বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকা। এসোসিয়েশন অফ সার্টিফাইড ফ্রড ইক্সামিনার (এসিএফই) এর একটি রিপোর্টে বলা হয় যে, প্রতি বছর সারা বিশ্ব প্রতারণার জন্য শতকরা প্রায় ৫ ভাগ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ২০১১ সালে প্রতারণার ফলে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্ষতি হয়েছে। রিসার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) প্রতারণার ঝুঁকি নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করছে। তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতে প্রতারণা একটি স্বপ্রণোদিত কাজ যা কারো সহযোগীতায় বা সহযোগীতা ছাড়া সংঘটিত হয়। এর ফলে ব্যাংকের লেনদেন এ পরিবর্তন আসে যা হিসাবের বই দেখার মাধ্যমে বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ধরা পরে। এর ফলে একজন ব্যক্তি অসাধু উপায়ে কিছু অর্থ অর্জন করে যার ফলে ব্যাংক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, অনেক সময় হয়না।
অগণিত অর্থের লেনদেনের জন্য ব্যাংক সবসময়ই প্রতারকদের কাছে স্বর্গ। ব্যাংকিং খাতে প্রতারণার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল প্রযুক্তির ব্যবহার। আরবিআই এর মতে, ২০১২-১৩ সালে প্রতারনাজনিত কারণে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছিল যা ২০০৯-১০ এর তুলনায় ৪ গুণ বেশি। শতকরা ৬৫ ভাগ প্রতারণার ঘটনা প্রযুক্তিগত কারণে হয়ে থাকে অর্থাৎ এটিএম, ক্রেডিট কার্ড বা আন্ত:ব্যাংকিং ইত্যাদির মাধ্যমে। বাংলাদেশেও এ ধরনের প্রতারনার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে একটি অত্যাধুনিক ব্যাংকের আইটি সফ্টওয়ার পরিবর্তনের সময় ১.৫০ বিলিয়ন টাকা আÍসাত করা হয়েছে।
প্রতারণা মূলত সঞ্চয় হিসাবে, লোন হিসাবে, লেনদেন সংক্রান্ত কাজে ও আইটি সফ্টওয়ার এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটি একটি দলের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংকের কর্মকর্তাও জড়িত থাকতে পারে।
বড় ধরনের প্রতারকের দল মূলত ৩ ধরনের হতে পারে- ১) প্রযুক্তি সম্বন্ধনীয় ২) সঞ্চয় হিসাব সম্বন্ধনীয় ৩) দেনা-পাওনা সম্বন্ধনীয়
ব্যংকিং খাতের প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি এর ভুক্তভোগী হয়। এটি একেবারে নির্মূল করা না গেলেও কিছু পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রনে রাখা যেতে পারে।
ব্যাংকিং খাতে লুটপাট সহ সকল প্রকার প্রতারণা নিয়ন্ত্রনে করনীয়: প্রতারণার পরিমাণ কমাতে প্রতিটি ব্যাংক নিজস্ব উদ্যেগে কমিটি গঠন করতে পারে। কমিটিতে রাখতে হবে যোগ্য ও বুদ্ধিমান লোক। অবশ্যই এমন একজনকে রাখতে হবে যিনি আইটি বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখেন। প্রতিটি অনুষদের আধুনিকায়ন করতে হবে এবং গোপন পিন নাম্বার এর মাধ্যমে সুরক্ষার পড়ত গড়ে দিতে হবে। প্রতারক গোষ্ঠী মাঝে মধ্যেই বাজারে কৃত্তিম অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করে। তাই এই বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকে অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করতে হবে যাতে বাজারের প্রকৃত অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ নেয়া যায়। প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
অতীত ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পারি যে, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি বা লুটের সাথে সবসময় ব্যাংকের কর্মকর্তরা জড়িত থাকেন। তাই ব্যাংকে কর্মরত সবাইকে সৎ হতে হবে। নিজের দায়িত্ব মনে করে, সৎ থেকে যদি সবাই কাজ করে তবে প্রতারণাসহ আরো অনেক সমস্যাই প্রতিরোধ করা যাবে।
কোন দেশের ব্যাংক লুট হলে বা প্রতারণার শিকার হলে ভুক্তভোগী হয় সেই দেশের সাধারন মানুষ। তাই এই খাতের প্রতারণা নিয়ন্ত্রনে তাই সবাইকেই আরো বেশি মনযোগী হতে হবে।