| ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সফল মানুষেরা যা কখনোই করেন না

Image
By
April 16, 2024
Image
ইসলাম গ্রুপের জহুরুল ইসলাম, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, সানমুন গ্রুপের মেজর(অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মান্নান, স্কয়ার গ্রুপের স্যামসন এইচ অথবা প্যারাডাইজ কেবলস লিমিটেড এর মোবারক হোসেন- এঁদেরও কি জীবনের গল্প এক - সংগ্রামের?

সফল মানুষেরা হাল ছাড়েন না! পর্যাপ্ত সাধনা, মনঃসংযোগ ও ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই সাফল্যের চূড়ায় উপনীত হওয়া সম্ভব। যদি আমরা সফল মানুষদের জীবনকাহিনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে তাঁদের মাঝে সবসময়ই হার-না-মানা লড়াকু মনোভাব এবং সাফল্যের জন্য ক্ষুধা ছিল। এমন কিছু মানুষের গল্প বলছি আজ যাঁরা কখনও হাল ছেড়ে দেন নি এবং অবশেষে জীবনে সবকিছুই অর্জন করতে পেরেছেন।

হেনরি ফোর্ড ‘ফোর্ড মোটর কোম্পানি’র মালিককে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বুকে সফল মানুষ হিসেবে জায়গা করে নিতে হয়েছিল। একটা সময় তাঁর ব্যবসার অংশীদাররা তাঁর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল যখন তিনি প্রথম একটি গাড়ি বানানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি এরপর আবারও শুরু করলেন, কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই ব্যর্থ হলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন নি। তিনি আরেকজন অংশীদারের খোঁজ পান এবং ‘ফোর্ড মোটর কোম্পানি’ এর ব্যাবসা শুরু করেন। আজ তাঁকে সবাই এক নামে চেনে।

ওয়ালট ডিজনি অনেকেই হয়তো জানে না যে কল্পনার সব চরিত্রকে এক করে যিনি একটি কাল্পনিক জগতের সৃষ্টি করেছেন, সেই ওয়ালট ডিজনিকে প্রথম জীবনে একটি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এই কারণে যে তিনি নাকি যথেষ্ট সৃজনশীল ছিলেন না! পরবর্তীতে তিনি ১৯২২সালে ‘লাফ-ও-গ্রাম’ নামে নিজস্ব একটি কোম্পানি চালানো শুরু করেন, যেটি কানসাসে কার্টুন ও ছোট বিজ্ঞাপন তৈরি করত। কিন্তু ১৯২৩ সালে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ব্যবসাপত্তর গুটিয়ে হলিউডে চলে যান এবং বাকিটা শুধুই ইতিহাস।

রিচার্ড ব্রান্সন গত শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত একজন ব্যবসায়ী, যিনি একটি পত্রিকা শুরু করার জন্য হাইস্কুল ছেড়ে দেন এবং এরপর সেখানে সফল হতে না পেরে মেইল অর্ডার রেকর্ড ব্যবসা শুরু করেন। কিছুটা সফল হবার পর তিনি একটি রেকর্ড শপ চালু করেন যার নাম ছিল ‘ভার্জিন’। তিনি বেশ কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগে অসফল হন, যেমন- ভার্জিন ভদকা, ভার্জিন কোলা, ভার্জিন প্রতিযোগিতা, ভার্জিন কাপড়। কিন্তু তিনি বিরাট সাফল্য পান ভার্জিন মিউজিক, ভার্জিন আটলান্টিক এবং ভার্জিন অ্যাক্টিভ এর মাধ্যমে।

অপরাহ উইনফ্রে ইনি সেই কিংবদন্তী টক-শো উপস্থাপিকা এবং ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে বিশ্বের এক নম্বর সেলিব্রেটি, যাঁকে কিনা সাফল্যের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রথমদিককার একটি রিপোর্টিং এর চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্থ করা হয় এই অভিযোগে যে তিনি টেলিভিশনের জন্য অননুপযুক্ত। যখন তিনি ডব্লিউ-জে-জেড টিভিতে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করতেন তখন তাঁকে সাপ্তাহিক ছুটিতে ৬টার খবর থেকে সকালের টিভিতে অবনমনমূলক বদলি করা হয়। তিনি সেই সব বাধা জয় করেন হার-না-মানা লড়াকু মনোভাব দিয়ে এবং শীর্ষে জায়গা করে নেন। এখন গোটা পৃথিবীই তাঁর নাম জানে।

জে.কে.রাউলিং জে.কে.রাউলিংএকজন নারী যিনি শিশুদের বইয়ের জাদুর রাজ্যে হারিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছেন লিখনী দিয়ে, তাঁর নিজের জীবনের গল্প খুব একটা জাদুকরী ছিল না। তাঁকে বহুবার উপেক্ষার আঘাত সইতে হয়েছে এবং অনেক প্রকাশকই বলেছে যে হ্যারি পটার শিশুতোষ বইয়ের তুলনায় অনেক দীর্ঘপাঠ্য এবং এটি কখনোই লাভের মুখ দেখবে না। কিন্তু এই দৃঢ়প্রত্যয়ী মহিলা চেষ্টা করতে থাকেন। হ্যারি পটার সর্বকালের অন্যতম বিখ্যাত একটি সিরিজ হিসেবে সমাদৃত হয় যার ৪০০মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং ৮টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে।

বিল গেটস শিশু থেকে বৃদ্ধ-কম্পিউটার ব্যবহার করা প্রতিটি মানুষই এই মানুষটির নাম জানে। পল অ্যালেন ও পল গিলবারটের সাথে ট্র্যাক-ও-ডাটা শুরু করার জন্য তিনি হার্ভার্ডে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এই কোম্পানিটি রাস্তায় যান চলাচলের তথ্য পড়তে ও যান চলাচল প্রবাহের প্রতিবেদন তৈরি করত। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০সালের মধ্যে কোম্পানিটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং একসময় বন্ধ হয়ে যায়। আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে বিল গেটস ও পল অ্যালেন মাইক্রোসফট এর ব্যবসা শুরু করেন এবং কম্পিউটারজগতকে আমূল বদলে দেন।

উল্লিখিতদের সাথে আমরা যদি স্তিভ জবস, মিলটন হারশে, এইচ.জে.হেইঞ্জ এর দিকে তাকাই, তবে দেখব যে তাঁরা সবাই তাঁদের যাত্রাপথে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু কখনোই হাল ছেড়ে দেননি। তাঁদের সাফল্যই প্রমাণ করে, সফল হবার ক্ষুধা থাকলে এটি সফলতার পথে ধাবিত করবেই।

একই কথা কি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? হয়তবা। ইসলাম গ্রুপের জহুরুল ইসলাম, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, সানমুন গ্রুপের মেজর(অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মান্নান, স্কয়ার গ্রুপের স্যামসন এইচ অথবা প্যারাডাইজ কেবলস লিমিটেড এর মোবারক হোসেন- এঁদেরও কি জীবনের গল্প এক - সংগ্রামের? হয়তোবা তাই। বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানদের পারিবারিক জুট মিল স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয়করন হয়। তারা তখন ট্রেডিংয়ে মনোযোগ দেন। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তারা এগিয়েছেন। অনেক অপবাদ দেয়া হয়েছে সালমান এফ রহমান এর নামে, রাজনৈতিক ভাবে আঘাত করা হয়েছে, অসংখ্য বাধা-বিপত্তির মুখে ফেলা হয়েছে কিন্তু তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন বার বার, এগিয়ে গেছেন এবং বেক্সিমকো গ্রুপকে করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি।

মনঃসংযোগ ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এরা সকলে জয় করেছেন।

PREVIOS POST
জিরো কুপন বন্ডের অনুমতি পেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ
NEXT POST
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঠিক পথে

Related Posts